আউটসোর্সিং কি (Outsourcing)

আউটসোর্সিং কি

আউটসোর্সিং (Outsourcing) কি অথবা কিভাবে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করবেন? হ্যাঁ, আমরা জানি, বর্তমান সময়ে আউটসোর্সিং সবচেয়ে চাহিদাপূর্ণ ক্যারিয়ারগুলোর মধ্যে একটি। আপনি যদি খুব অল্প সময়ের মধ্যে কোন একটি দক্ষতার মাধ্যমে আয় করে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলতে চান, তাহলে এটি আপনার জন্য একটি উত্তম উপায়। আজকের আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে আউটসোর্সিং । তো চলুন সেই সম্পর্কে নিচের লেখনি থেকে জেনে নিয়ে আসি । অবশ্যই আপনাকে সম্পুর্ন বিষয়টি ভালোভাবে পড়তে হবে নয়তো ভালোভাবে বুঝতে অসুবিধা হবে । তাই সবাইকে সম্পুর্ন কন্টেনটি ভালোভাবে আয়ত্ত করার জন্য অবশ্যই বলবো ।

আউটসোর্সিং

তবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আপনাকে হতে হবে দক্ষ, ধৈর্য্যশীল, এবং সৃষ্টিশীল। এই পুরো আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রিটি ইন্টারনেট মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল, তাই এখানে আপনাকে প্রত্যেকবার নিজেকে প্রমাণ করতে হবে কাজ পাওয়ার জন্যে আপনাকে হতে হবে দক্ষ এবং সৃজনশীল ।

এবার মূল আলোচনায় আসি, আউটসোর্সিং কি?
আউটসোর্সিং মূলত একটি ব্যবসায়িক শব্দ, যার মানে হচ্ছে, কোন কাজ কোম্পানির অভ্যন্তরীণ কর্মচারীকে দিয়ে না করিয়ে ওই কাজ বাইরের কাউকে দিয়ে করিয়া নেয়া। তবে আমরা যে আলোচনা করতে চাচ্ছি সেই দিক্ দিয়ে বলতে গেলে, আউটসোর্সিং কে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে ব্যবহার করার বুঝায়।

মানে হচ্ছে, আপনি যদি যেকোন একটি বিষয়ে পারদর্শী হন, আর সেই কাজ অন্য কোন কোম্পানির জন্যে করতে চান, তখন সেটা ফ্রিল্যান্সিং বুঝায়।

তবে হ্যাঁ, আমরা শুরুতে আউটসোর্সিং কে ফ্রিল্যান্সিং এর সাথেই আলোচনা করেছি। কারণ, আমাদের মূল উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে, কিভাবে আপনি আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারবেন।

আপনাকে মনে রাখতে হবে, আপনি আউটসোর্সিং করছেন না, বরং আপনাকে যারা আউটসোর্সিং করছে,

ধরুন, আপনি একটি কোম্পানির মালিক, আর আপনার একটি কাজের জন্যে জনশক্তি প্রয়োজন হলো, কিন্তু, লোকবলের অভাবে ঐ কাজ আপনার নিজের কর্মচারী দিয়ে করিয়ে নেয়া সম্ভব না।

অথবা, আপনার কর্মচারী দিয়ে করাতে গেলে যেই খরচ হবে সেটা আপনার বাজেটকে অতিক্রম করে। তখনই আপনি চিন্তা করলেন একজন বাইরের লোককে দিয়ে এই কাজটি করিয়ে নিবেন। এ ধরনের কাজের ক্ষেত্রে সেটিকে আমরা বলে থাকি ক্লাইন্ট । সেটা হতে পারে বাইরের দেশের এবং নিজ দেশের মধ্যে । এভাবে বাইরের থেকে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন মাধ্যমে আউটসোর্সিং করে ইনকাম করা হয়ে থাকে ।

আপনার সেই কাজের জন্য বিভিন্ন আউটসোর্সিং প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। যেমন, আপওয়ার্ক, ফাইভার, পিপল পার আওয়ার ইত্যাদি ।

আউটসোর্সিং এর উদ্দেশ্য

আউটসোর্সিং এর উদ্দেশ্যে দুই ধরনের হতে পারে । এখানে পর্যায়ক্রমে আমরা আলোচনা করেছি । বিস্তারিত পড়লে অবশ্যই বিষয়গুলো আপনাদের সহজ মনে হবে । ব্যবসায়িক দিক থেকে বলি তাহলে দুটি উদ্দেশ্যের যেকোন একটি হতে পারে। যদিও আগের উদাহরণে দুটি বিষয়েরই উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যাপারটা সেরকমই।

মানে আপনি কোন কাজ বাইরের মানুষকে দিয়ে করিয়ে নিতে চাচ্ছেন সেটা সময় বাঁচানোর জন্যে, কম খরচের করার জন্যে, অথবা অস্থায়ী কাজের জন্যে স্থায়ী কাউকে নিয়োগ না করার জন্যে, যেকোন কারণে হতে পারে। বা যেকোন কাজের জন্য হতে পারে ।

তবে তার মধ্যে বাজেট কমানো এবং নতুনভাবে নিয়োগ না করেও কাজ ভালভাবে করিয়ে নিয়ে আসার প্রবণতা থেকেই মূলত হয়ে থাকে।

আর ফ্রিল্যান্সিং দিক থেকে বলতে গেলে বলতে হবে, ফ্রিল্যান্সাররা মূলত তাদের সেবা প্রদান করার জন্যে ঐসব কোম্পানিকে প্রস্তাব করে, বা কাজ আউটসোর্স করে।

মানে হচ্ছে একজন কাজ করিয়ে নেয়ার জন্যে আউটসোর্স করে, আর ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করে দেয়ার জন্যে আউটসোর্স করে থাকে । যারা কাজ করিয়ে নেয় তাদের কাজের বিনিময়ে যে কাজ করে থাকে তাকে বেনিফিট দিতে হয় । আর কাজ করলে তো সেটার জন্য ফি থাকতেই হবে কেননা সেটি হচ্ছে মূল্যবান ।

তবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আপনাকে হতে হবে দক্ষ, ধৈর্য্যশীল, এবং সৃষ্টিশীল। এই পুরো আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রিটি ইন্টারনেট মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল, তাই এখানে আপনাকে প্রত্যেকবার নিজেকে প্রমাণ করতে হবে কাজ পাওয়ার জন্যে।

সময়ের প্রতি খুবই সতর্ক হবার পাশাপাশি আপনাকে সততার ও আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজ করতে হবে।

আউটসোর্সিং কি (Outsourcing)

আউটসোর্সিং করতে হলে যে বিষয় জানতে হবে

আউটসোর্সিং করতে হলে বেশ কিছু জিনিসের প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে আপনাকে কিছু বিষয় সব সময় মনে রাখতে হবে, তা না হলে হয়তো আপনি এই ইন্ডাস্ট্রিতে উঠে দাঁড়াতে পারবেন না।

নির্দিষ্ট বিষয়ে ভাল দক্ষতা
নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে আবেদন করার যোগ্যতা
আবেদনে সাড়া পেলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা
কাজ শেষে ক্লায়েন্ট এপ্রুভালের পরেই শুধু পারিশ্রমিক পাওয়া যাবে

বিশেষ করে আউটসোর্সিং বিষয়ে নতুনদের যে দক্ষতাগুলি থাকতেই হবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকা। আর নতুন নতুন কাজ শিখতে থাকা অথবা সে যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয়ে নিজের জ্ঞানকে আরো উন্নত করা। নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে নিজেকে আরো বেশি দক্ষ করে তোলা।

আউটসোর্সিংএ কি কি কাজ করার সুযোগ আছে?

আপনি যেকোন কাজ আউটসোর্স করতে পারেন। তবে যদি জনপ্রিয়তার দিক থেকে দেখি তাহলে অবশ্যই কিছু কাজ আছে যেগুলো অনেক বেশি বিক্রি হয়।

আসুন সেই কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় কিছু কাজের নাম জেনে নিই। নিচের তালিকায় আপনাকে আমরা দেখাবো আউটসোর্সিং এর সেরা শাখাগুলো।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
ক্রিয়েটিভ ডিজাইন
এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস
ওয়েবসাইট মেইন্টেইনেন্স
গ্রাফিক্স ডিজাইন
কাস্টমার সার্ভিস
ডিজিটাল মার্কেটিং
কপিরাইটিং
রিমোট অফিস এসিস্ট্যান্ট
সেলস এন্ড মার্কেটিং

ফ্রিল্যান্সার হিসাবে আপনি যদি উপরে উল্লেখ করা কাজের ওপরে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, তাহলে আপনি অনেক বেশি কাজ পেতে পারেন। তবে, একই সাথে আপনাকে বাজারে কোন কাজের অবস্থা বুঝতে হবে।

অর্থাৎ, কোন কাজ কখন চলছে বা ভবিষ্যতে কাজের চাহিদা কেমন থাকবে সেটা বুঝতে হবে। আপনি যদি এটা বুঝতে পারেন, তাহলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে অনেক টাকা আয় করতে সক্ষম হবেন।

আউটসোর্সিং এর সুবিধা সমূহ

আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেয়ার অনেকগুলো সুবিধা আছে। আসুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় সুবিধা সম্পর্কে জেনে নিই।

দক্ষ মানুষঃ ফ্রিল্যান্সাররা স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি দক্ষ হয়, কারণ তারা একই কাজ বিভিন্ন ক্লায়েন্টের জন্যে বার বার করে থাকে। এতে তাদের কাজের দক্ষতা সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে।

কাজের ব্যয়ঃ যেহেতু আউটসোর্সিং করে কাজ করিয়ে নিতে আপনার কোন অফিস কিংবা আলাদা নির্ধারিত লোকবলের প্রয়োজনে হয় না তাই এই কাজের ব্যয়ও তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

দ্রুত কাজ করিয়ে নেয়াঃ ফ্রিল্যান্সাররা সব সময়ই নির্ধারিত সময়সীমা মেনে কাজ করার চেষ্টা করে। কারণ, দক্ষ লোকেরা কাজ পেয়ে থাকে নিয়মিত। তাই তারা যত দ্রুত একটি কাজ শেষ করতে পারবে ততদ্রুত অন্য ক্লায়েন্টের কাজ শুরু করতে পারবে।

বিরতিহীন কাজঃ আউটসোর্সিং করে কাজ করিয়ে নেয়ার আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, ফ্রিল্যান্সাররা যেকোন সময় কাজ করে। অন্যদিকে অফিসে কর্মচারিদেরকে সরকারি ছুটির দিনে ছুটি দিতে হয়। কিন্তু ফ্রিল্যান্সারদেরকে কোন ছুটি দিতে হয় না।

আউটসোর্সিং এর অসুবিধা সমূহ

অন্যদিকে আউটসোর্সিং এর কিছু অসুবিধাও আছে। কাজের মধ্যে সবসময় যে সুবিধা থাকবে বা সব সময় যে অসুবিধাই চলবে তা কিন্তু না । অনেক সময় আছে যে কাজের মধ্যেও অনেক সুবিধা পাওয়া যায় যা দিয়ে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার মতো হয় । আবার মাধে মদ্যে অনেক অসুবিধার সম্মুখিন হতে হয় । চলুন জেনে নেয়া যাক, আউটসোর্সিং এ মনে রাখার মত কিছু অসুবিধা।

গোপনীয়তা ভঙ্গঃ যেহেতু ফ্রিল্যান্সাররা আপনার নিয়োগ করা কর্মচারী নয়, তাই তাদের কাছে আপনার কোম্পানীর গোপন বিষয় সম্পর্কে তথ্য থাকতে পারে। আর সেই তথ্য অন্য কোথাও চলে যেতে পারে।

দক্ষ ফ্রিল্যান্সার খুঁজে পেতে ব্যর্থ হওয়াঃ হ্যাঁ, আপনি যদি ভাল মানের ফ্রিল্যান্সার খুঁজে নিতে ব্যর্থ হন তাহলে আপনি খারাপ কোয়ালিটির কাজ পাবেন। বা কাজ করে দিলেও ভালো মানের কাজ আপনি করিয়ে নিতে পারলেন না । আপনার মনের মতো করে কাজটি সম্পন্ন করতে পারলেন না । তাই কিভাবে ভাল ফ্রিল্যান্সার খুঁজে পাওয়া যাবে তা আপনাকে অবশ্যই শিখতেই হবে। তা না হলে অসুবিধা রয়েছেই ।

ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সমস্যা: এই ধরনের ক্ষেত্রে আপনার ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। কারণ কর্মচারীরা স্বাধীনভাবে কাজ করে। তারা তাদের ইচ্ছা মত কাজ করে এবং নিজেদের জীবন নিজেদের মত করে চালায়।

আউটসোর্সিং কি (Outsourcing)

আউটসোর্সিং কাজের জন্য কিছু ফ্রিল্যান্সিং ঠিকানা

বর্তমানে ইন্টারনেটে অনেক আউটসোর্সিং প্লাটফর্ম আছে যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করছেন। নিচে এমনই কিছু স্বনামধন্য আউটসোর্সিং প্ল্যাটফর্মের নাম উল্লেখ করা হয়েছে । যেগুলো বর্তমান সময়ে অনেক ফ্রিল্যান্সার কাজে মগ্ন হয়ে আছেন অনেক অনেক টাকার কারবারি চলছে । আপনি ধারনা করতে পারবেন না আসলে এগুলোতে কিভাবে কি হয়ে যাচ্ছে ।

ফাইভার – Fiverr.Com
আপওয়ার্ক – Upwork.Com
ফ্রিল্যান্সার ডটকম – Freelancer.Com
গুরু – Guru.Com
টপটল – Toptal.Com

আউটসোর্সিং ও বাংলাদেশ

বাংলাদেশ আউটসোর্সিং এ পূর্বের থেকে বর্তমান অবস্থা অনেক ভাল করছে। বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগ এবং এই স্বাধীন পেশার প্রতি মানুষের আগ্রহ এই সেক্টরে একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে এমন অনেক ফ্রিল্যান্সার আছেন যারা প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ টাকা আয় করে থাকেন।

তবে সরকার যদি ফ্রিল্যান্সারদের পারিশ্রমিক পাওয়ার ক্ষেত্রে ভাল উদ্যোগ নিতে পারে তাহলে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা অনেক ভাল করবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে আরো । বর্তমান সময় থেকে অনেক ভালো ফলাফল এই ফ্রিল্যান্সিং পেশার মানুষদের জন্য । সবাই এখন এই পেশাটিকে বেছে নিচ্ছে বাংলাদেশের বেকার সমস্যা দিন দিন কমছে । বেকার যুবক যুবতী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত এই মুক্ত পেশাটিকে বেছে নিয়েছে এবং জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছে সেই সাথে পরিবার সমাজ তথা দেশের উন্নতি হচ্ছে ।

ভবিষ্যৎ সমীক্ষা করে দেখা গেলে সামনের দিনগুলােতে এই পোশাটির উপরে অধিকাংশ মানুষজন অংশ নিবেন এবং বাংলাদেশের যে ফ্রিল্যান্সারদের ভবিষ্যৎ তৈরী হবে তাতে করে আমাদের দেশ অনেকাংশে এগিয়ে যাবে ।

সবশেষে আমাদের এই লেখনিটি সম্পর্কে আপনার কোনো ধরনের মন্তব্য থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট সেকশনে গিয়ে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন । এবং আপনার ভালো লেগে থাকলে অথবা বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেয়ে অনেকটা উপকারে আসলে অবশ্যেই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না । আর আমাদের এই ঠিকানায় নিত্যনতুন এ ধরনের গুরুত্বপূর্ন তথ্য নিয়ে আমরা আলোচনা করে থাকি ।